welq: বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
Aa¨vq: পূর্ব বাংলার আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদের উত্থান (১৯৪৭-১৯৭(
1| wb‡Pi DÏxcKwU co Ges cÖkœ¸‡jvi DËi `vI :
নির্বাচন বিষয়ক এক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে আজমল হোসেন বলেন, “এটি পাকিস্তান আমলের নির্বাচন যাতে চারটি দল সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করে জয়ী হয় এবং তারা সরকার গঠন করে"। তিনি আরেকটি নির্বাচনের কথাও উল্লেখ করে বলেন, 'এটি এক ব্যক্তির এক ভোটের ভিত্তিতে অনুষ্ঠাতব্য সাধারণ নির্বাচন এবং এ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দল বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।"
ক. তমদ্দুন মজলিস কী?
খ. ৬-দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের শুরুতে কোন নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. "উদ্দীপকের ২য় নির্বাচনটি ছিল বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান”- সপক্ষে যুক্তি দাও।
DËi
ক. তমদ্দুন মজলিস হলো ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন।
খ. ছয় দফা দাবিতে বাঙালির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির কথা উল্লেখ থাকায় একে বাঙালির মুক্তির সনদ বলা হয়। ১৯৬৬ সালের ৫-৬ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলসমূহের এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ছয় দফা কর্মসূচি ছিল প্রথম বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। এতে বাঙালির চরম প্রত্যাশিত স্বায়ত্তশাসনের জোর দাবি উত্থাপন করা হয়। এতে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা না হলেও এ কর্মসূচি বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। এ কারণেই ৬ দফাকে পূর্ব বাংলার মুক্তির সনদ বলা হয়।
গ. উদ্দীপকের শুরুতে যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে তার সাথে পাকিস্তান আমলে অনুষ্ঠিত ১৯৫৪ সালের পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের সাদৃশ্য রয়েছে। পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৩ সালের ১৪ই নভেম্বর আওয়ামী লীগ ৫টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। দলগুলো হলো- আওয়ামী লীগ, কৃষক-শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম, বামপন্থী গণতন্ত্রী দল ও খেলাফতে-রাব্বানি পার্টি। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন লাভ করে। এর ফলে যুক্তফ্রন্ট প্রাদেশিক সরকার গঠনের রায় লাভ করে। উদ্দীপকে বলা হয়েছে, নির্বাচন বিষয়ক এক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে আজমল হোসেন পাকিস্তান আমলে অনুষ্ঠেয় একটি নির্বাচনের কথা বলেন যাতে চারটি দল সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করে। তারা নির্বাচনে জয়ী হয় এবং সরকার গঠন করে। এখানে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ১৯৫৪ সালের পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক নির্বাচনেও পূর্ব বাংলার জনগণ বিপুল ভোটে যুক্তফ্রন্টকে বিজয়ী করে।
ঘ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় নির্বাচনটি অর্থাৎ ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর পাকিস্তানে সর্বপ্রথম এক ব্যক্তির এক ভোটের ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ফলে ছয় দফা ও এগারো দফার প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক বিজয় ঘটে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিক সরকার ও স্বার্থান্বেষী মহলের জন্য এটি ছিল বিরাট পরাজয়। শাসকগোষ্ঠী নির্বাচনে বিজয়ী বাঙালির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। ফলাফল হিসেবে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। উদ্দীপকে বর্ণিত আজমল সাহেব তার বক্তব্যে আরেকটি ১৯৭০ সালের নির্বাচনের কথা বলেন। এ নির্বাচন ছিলো এক ব্যক্তির এক ভোটের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন। এ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, ১৯৭০ সালের নির্বাচন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিল।
২| wb‡Pi DÏxcKwU co Ges cÖkœ¸‡jvi DËi `vI :
দৃশ্যকল্প-১: বাংলাদেশি হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে নাবিল বেশ গর্ববোধ করে। তার দেশের জনগণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিশ্ববাসী পেয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে মায়ের ভাষা পালনের অধিকার।
দৃশ্যকল্প-২: 'A' এলাকা একসময় 'B' এলাকার অধীনে ছিল। সে সময়ে, 'A' এলাকার একজন নেতা জনগণের বিভিন্ন বিষয়ের অধিকারের বৈষম্য নিয়ে প্রতিবাদ করায় এবং কিছু গোপন পরিকল্পনা করার কারণে গ্রেফতার হন। 'A' এলাকার লোকজনের তীব্র প্রতিবাদের মুখে' 'B' এলাকার শাসকগোষ্ঠী তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
ক. জাতীয়তাবাদ কী?
খ. পাকিস্তানের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানের ভূমিকা নগণ্য ছিল কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. দৃশ্যকল্প-১ তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন বিষয়কে ইঙ্গিত করছে? ব্যাখ্যা করো।
'ঘ. "দৃশ্যকল্প-২ এ নির্দেশিত ঘটনাটিই 'A' অঞ্চলের জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেয়”- তুমি কি একমত? মতামতের সপক্ষে যুক্তি দাও।
DËi
ক. ভাষা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, নৃতাত্ত্বিক পরিচয় প্রভৃতির সমন্বয়ে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠে তাই জাতীয়তাবাদ।
খ. পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে পাকিস্তানের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানের ভূমিকা নগণ্য ছিল। সামরিক শাসনের ফলে সকল ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য চরম আকার ধারণ করতে থাকে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এ বৈষম্য ছিল ব্যাপক। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান প্রশাসনের প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ে ৮১% পশ্চিম পাকিস্তানির বিপরীতে ১৯% বাঙালির পদায়ন উক্ত বৈষম্যের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। মূলত পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক মনোভাবই এ ধরনের বৈষম্যের অন্যতম কারণ।
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়কে ইঙ্গিত করছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির আগে থেকেই এ রাষ্ট্রের ভাষা কী হবে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী, বাংলার মানুষের গণদাবিকে উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেয়। পূর্ব বাংলার জনগণ এ ঘোষণার বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করে। ১৯৪৭ সালে সূচিত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতিবাদ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে রূপলাভ করে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি (বাংলা ৮ই ফাল্গুন) ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্রদের একটি মিছিল বের হয়। পাকিস্তানি পুলিশবাহিনী এ মিছিলে গুলি চালালে শহিদ হন আবুল বরকত, জব্বার, রফিক, সালামসহ আরও অনেকে। এক পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। এ স্মৃতিকে স্মরণ করে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে সর্বস্তরের বাঙালি শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মাতৃভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ফলে বিশ্ববাসী মায়ের ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করার জন্য ভাষা দিবস পালনের সুযোগ লাভ করে। উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১ এ দেখা যায়, বাংলাদেশি হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে নাবিল গর্ববোধ করে। কারণ, তার দেশের জনগণের আত্মত্যাগের বিনিময়েই বিশ্ববাসী আন্তর্জাতিকভাবে মায়ের ভাষা পালনের অধিকার পেয়েছে। যা উপরে বর্ণিত ভাষা আন্দোলন ও এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ফলেই সম্ভব হয়েছে। তাই বলা যায়, দৃশ্যকল্প-১ ভাষা আন্দোলন ও এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়কে ইঙ্গিত করছে।
ঘ. 'দৃশ্যকল্প-২ এ নির্দেশিত ঘটনা তথা ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেয়'- মন্তব্যটির সাথে আমি একমত। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে থাকে। বাঙালিদের শোষণ ও বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দাবি ঘোষণা করেন। এ দাবির পক্ষে সমর্থন আদায় করতে তিনি সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এ আন্দোলন নস্যাৎ করতে পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা দায়ের করে। তাদের গ্রেপ্তার করে জেলে প্রেরণ করা হয়। উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-২ এর 'A' এলাকার একজন নেতাও কিছু গোপন পরিকল্পনা করায় গ্রেফতার হন, যা আগরতলা মামলার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বস্তুত ১৯৬৯ সালে এ মামলার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলন বিপ্লবাত্মক রূপ ধারণ করে, যা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত। দৃশ্যকল্প-২ এর এলাকার লোকজনের যে তীব্র প্রতিরোধের কারণে শাসকগোষ্ঠী গ্রেপ্তারকৃত নেতাকে ছেড়ে দেয় তা ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানকেই নির্দেশ করে। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের প্রচণ্ডতায় ভীত হয়ে আইয়ুব সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুসহ সকল বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এর ফলেই সামরিক শাসক আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। নতুন শাসক ইয়াহিয়া খানও অচিরেই ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হন। '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের ফলে পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে এবং স্বাধিকারের দাবি জোরদার হয়। এর প্রভাবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে এবং সর্বস্তরের জনগণ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, দৃশ্যপট-২ এ নির্দেশিত ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।
৩| wb‡Pi DÏxcKwU co Ges cÖkœ¸‡jvi DËi `vI :
একটি দেশের দু'টি অঞ্চলের মধ্যে 'E' নামক অঞ্চলটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিল। এটিকে সুরক্ষার জন্য ঐ অঞ্চলের গণমানুষের নেতা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নিকট কিছু অধিকার আদায়ের দাবি উত্থাপন করেন। যা 'E' অঞ্চলের জনগণের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল।
ক. মৌলিক গণতন্ত্র কী?
খ. 'যুক্তফ্রন্ট' কেন গঠিত হয়েছিল? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'E' অঞ্চলের জনগণের অধিকার আদায়ের দাবি উত্থাপনের পটভূমি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'E' অঞ্চলের স্বাধীনতার পক্ষে উক্ত দাবিসমূহ বিশেষ ভূমিকা রেখেছে" - বিশ্লেষণ করো।
DËi
ক. জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে ক্ষমতা দখলের পর নিজের ক্ষমতা ও সামরিক শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে যে পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি চালু করেন তাই মৌলিক গণতন্ত্র।
খ. ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে 'যুক্তফ্রন্ট' গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ, দমননীতি, বাংলা ভাষার অবমাননা ইত্যাদি কারণে মুসলিম লীগের প্রতি পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন অগণতান্ত্রিক ও দুর্নীতিপরায়ণ মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম, খেলাফতে রাব্বানী এবং গণতন্ত্রী দলের সমন্বয়ে 'যুক্তফ্রন্ট' গঠন করা হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'E' অঞ্চলের জনগণের অধিকার আদায়ের দাবি ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার তথা পশ্চিম পাকিস্তান বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ ও অবহেলা শুরু করে। যার প্রথম আঘাত আসে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে। রাজপথে রক্তের বিনিময়ে ১৯৫২ সালে বাঙালিরা ভাষার দাবি আদায় করে। এর পথ ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫-৬ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলের সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রাণের দাবি ঐতিহাসিক ৬ দফা পেশ করেন। এ দাবিগুলোর মধ্যে ছিলো- পূর্ব পাকিস্তানের সরকারব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, মুদ্রা, বৈদেশিক মুদ্রার মালিকানা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাহিনী গঠন বিষয়ক প্রস্তাব। এই দাবিগুলোর সাথে পূর্ব পাকিস্তানিরা একাত্মতা ঘোষণা করে। কারণ, বঙ্গবন্ধুর প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের পূর্ণ আস্থা ছিল। উদ্দীপকে দেখা যায়, একটি দেশের দুটি অঞ্চলের মধ্যে 'E' নামক অঞ্চল সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিল। এটি সুরক্ষার জন্য ঐ অঞ্চলের গণমানুষের নেতা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নিকট জনগণের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং রাজনৈতিক অধিকার সম্বলিত দাবি উত্থাপন করেন। যা উপরে আলোচিত ৬ দফা দাবির অনুরূপ। মূলত পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন বৈষম্যের প্রেক্ষিতে ৬ দফা উত্থাপিত হয়েছিল।
ঘ. উদ্দীপকের 'E' অঞ্চলটি তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে উক্ত দাবিসমূহ অর্থাৎ ৬ দফা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ৬ দফার গুরুত্ব অপরিসীম। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ৬ দফাভিত্তিক স্বাধিকার আন্দোলন ও ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনের পথ ধরে বাঙালি স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর হয়। এ দাবিনামায় পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্য ও অবিচার থেকে বাঙালির মুক্তির আভাস ছিল। ৬ দফার দাবিতে পূর্ব বাংলা ফুঁসে উঠলে স্বৈরাচারী আইয়ুব খান সরকারের ভিত কেঁপে ওঠে। এ আন্দোলন দমনে পাকিস্তান সরকারের নিপীড়ন, জেল বা মামলা বাঙালির ক্ষোভের আগুনকে নেভাতে পারেনি। ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৯ সালে সামরিক শাসনবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। আর এর ধারাবাহিকতায়ই আসে আইয়ুব খানের পদত্যাগ এবং সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক বিজয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকরা বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণে বাঙালিকে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দেন। জবাবে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে ঢাকায় গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি জান্তা। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। পরিশেষে বলা যায়, ছয় দফা দাবি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে, প্রতিবাদী হয়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করেছিল। ফলে বাঙালি ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধিকার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
৪| wb‡Pi DÏxcKwU co Ges cÖkœ¸‡jvi DËi `vI :
ঘটনা-১: রফিক তার বাবার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে যায়। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীরে লেখা কতগুলো দাবি দেখতে পায়। বাবা রফিককে বলেন, আমাদের 'ক' নামক একজন নেতা রাজনৈতিক অধিকার রক্ষায় কতগুলো দাবি তৎকালীন শাসকবর্গের নিকট উত্থাপন করেছিলেন।
ঘটনা-২: আন্দোলন ও সফলতার যোগসূত্র শীর্ষক আলোচনা সভায় জনাব কামাল বলেন, একটা সময় আমাদের জনপ্রিয় এক নেতার বিরুদ্ধে দেশের - বিপক্ষে ষড়যন্ত্র করছেন। আবার পরবর্তী বছরে এর বিরুদ্ধে সৃষ্ট আন্দোলনে সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক নিহত হন। যার ফলে আমাদের দেশ আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রে এগিয়ে যায়।
ক. মৌলিক গণতন্ত্র কী?
খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গ. রফিকের বাবার কথায় তোমার পাঠ্যপুস্তকের কোন দাবির সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. জনাব কামালের আলোচনায় যে দুটি বিষয়ের ইঙ্গিত রয়েছে তা আমাদের দেশের আত্মপ্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে- বক্তব্যটি মূল্যায়ন করো।
DËi
ক. পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান তার সামরিক শাসনকে দীর্ঘায়িত করতে যে বিতর্কিত স্থানীয় সরকার পদ্ধতি চালু করেন তা-ই মৌলিক গণতন্ত্র।
খ. বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাকে মুক্তিযুদ্ধের চরিত্র দানে বিশাল ভূমিকা রাখায় ১৯৭০ সালের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বের দাবিদার। ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল পাকিস্তানে সর্বজনীন ভোটে অনুষ্ঠিত প্রথম ও শেষ সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। এ ফলাফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক বিজয় ঘটে। পরাজয় ঘটে
পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর। তারা বাঙালির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এর প্রতিবাদে বাঙালি যে আন্দোলন শুরু করে তার চূড়ান্ত পর্যায়ে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। কার্যত সত্তরের নির্বাচনের পথ ধরেই বাঙালি লাভ করে স্বাধীনতা। এসব কারণেই ১৯৭০ সালের নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
গ. ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার তথা পশ্চিম পাকিস্তান বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ ও অবহেলা শুরু করে। যার প্রথম আঘাত আসে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে। রাজপথে রক্তের বিনিময়ে ১৯৫২ সালে বাঙালিরা ভাষার দাবি আদায় করে। এর পথ ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫-৬ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলের সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রাণের দাবি ঐতিহাসিক ৬ দফা পেশ করেন। এ দাবিগুলোর মধ্যে ছিলো- পূর্ব পাকিস্তানের সরকারব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, মুদ্রা, বৈদেশিক মুদ্রার মালিকানা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাহিনী গঠন বিষয়ক প্রস্তাব। এই দাবিগুলোর সাথে পূর্ব পাকিস্তানিরা একাত্মতা ঘোষণা করে। কারণ, বঙ্গবন্ধুর প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের পূর্ণ আস্থা ছিল। এটি সুরক্ষার জন্য ঐ অঞ্চলের গণমানুষের নেতা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নিকট জনগণের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং রাজনৈতিক অধিকার সম্বলিত দাবি উত্থাপন করেন। যা উপরে আলোচিত ৬ দফা দাবির অনুরূপ। মূলত পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন বৈষম্যের প্রেক্ষিতে ৬ দফা উত্থাপিত হয়েছিল।
ঘ. উদ্দীপকের জনাব কামালের আলোচিত দুটি বিষয় তথা আগরতলা মামলা এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আমাদের দেশের আত্মপ্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে- বক্তব্যটি যথার্থ। পশ্চিম পাকিস্তানি শোষণ থেকে পূর্ব বাংলার মুক্তির লক্ষ্যে গোপনে গঠিত বিপ্লবী পরিষদের একটি পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্মতি প্রদান করেন। কিন্তু বাস্তবায়নের পূর্বেই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। শাসকগোষ্ঠী ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বিচারকাজ শুরু হলে তা প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন শুরু হয়, যা ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এ আন্দোলনে শহিদ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ। উদ্দীপকের ঘটনা-২-এ জনাব কামালের বক্তব্যে আমাদের দেশের জনপ্রিয় নেতার বিরুদ্ধে শাসকবর্গ কর্তৃক দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ উঠে এসেছে। এর বিরুদ্ধে সৃষ্ট আন্দোলনে সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক নিহত হন এবং আমাদের দেশ আত্মপ্রকাশের দিকে এগিয়ে যায়। উদ্দীপকের এ ঘটনা আগরতলা মামলা এবং উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে আগরতলা মামলার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। এ আন্দোলনের তাৎক্ষণিক সাফল্য ছিল আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজবন্দিদের মুক্তিলাভ। এছাড়া এ আন্দোলনের ফলেই সামরিক শাসক আইয়ুব খান পদত্যাগে বাধ্য হন। তার পদত্যাগের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়। তারা চূড়ান্ত লক্ষ্য স্বাধীনতা অর্জনের পথে এগিয়ে যায়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট প্রদানের মাধ্যমে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ মহান মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি করে। যার মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। উপরের আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলা যায়, আগরতলা মামলার ফলে সৃষ্ট ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরেই জন্ম নিয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
৫| wb‡Pi DÏxcKwU co Ges cÖkœ¸‡jvi DËi `vI :
দৃশ্য-১: বিংশ শতকের ষাটের দশকের শেষ দিকে পূর্ব-বাংলার সাধারণ জনগণ তাদের দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নামে। এই আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক শহিদ হন।
দৃশ্য-২:
ক. যুক্তফ্রন্ট কী?
খ. ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের দৃশ্য-১ এ নির্দেশিত ঐতিহাসিক আন্দোলনটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের দৃশ্য-২ এ বৈষম্যের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা মোকাবেলায় ৬ দফা কর্মসূচি উত্থাপিত হয়েছিল- পক্ষে যুক্তি দেখাও।
DËi
ক. পূর্ব বাংলায় ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে ১৯৫৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর ৫টি দল নিয়ে গঠিত ঐক্যজোট হলো যুক্তফ্রন্ট।
খ. ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান তমদ্দুন মজলিসের ভূমিকা অপরিসীম। ১৯৪৭ সালের ২রা সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তমদ্দুন মজলিস নামের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ৬-৭ ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত উক্ত সংগঠনের যুবকর্মী সম্মেলন 'বাংলাকে শিক্ষা ও আইন আদালতের-বাহন' করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ভাষা আন্দোলনে এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এ সময়ে তমদ্দুন মজলিস ভাষা পরিষদ গঠন করে।
গ. উদ্দীপকের দৃশ্য-১ এ নির্দেশিত ঐতিহাসিক আন্দোলন ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান। বাঙালি জাতির রাজনৈতিক বিকাশ তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। বস্তুত প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের গণবিরোধী কর্মকাণ্ড ও সামরিক শাসনের অবসান এবং স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে এ গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। উদ্দীপকে দৃশ্য- ১ এ অনুরূপ অভ্যুত্থানের চিত্রই লক্ষণীয়। উদ্দীপকের দৃশ্য-১ এ বলা হয়েছে, বিংশ শতকের ষাটের দশকের শেষ দিকে পূর্ব বাংলার সাধারণ জনগণ তাদের দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নামে। এই আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক শহিদ হন। এ আন্দোলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১৯৬৯ সালে এ আন্দোলন সংঘটিত হয়। ইতিহাসে এটি উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত। সকল গণতান্ত্রিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও মানুষ যার যার অবস্থান থেকে এই আন্দোলনে যুক্ত হয়। আন্দোলনে যুক্ত হতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান আসাদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা শহিদ হন। প্রদেশব্যাপী ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তখন রাস্তায় নেমে আসে। অবশেষে ১৯৬৯ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। অন্য নেতৃবৃন্দকেও মুক্তি দেওয়া হয়। এমনকি গণঅভ্যুত্থানের ফলেই পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের দৃশ্য-১ এ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কথাই নির্দেশ করা হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের দৃশ্য-২ এ নির্দেশিত সামরিক বৈষম্যের মোকাবিলায় ছয় দফা কর্মসূচি উত্থাপিত হয়নি, এর পেছনে আরও বৈষম্য বিদ্যমান ছিল। পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে পূর্ব বাংলার অর্থনীতির চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতি সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। ১৯৫৫-৫৬ থেকে ১৯৫৯-৬০ অর্থবছরে পূর্ব পাকিস্তান মোট বাজেট বরাদ্দের মাত্র ১১৩ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা পায়। অন্যদিকে একই সময় পশ্চিম পাকিস্তান পেয়েছিল ৫০০ কোটি টাকা। একইভাবে ১৯৬০-৬১ থেকে ১৯৬৪-৬৫ অর্থবছরে বাজেটে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল ২২,২৩০ কোটি টাকা। বৈদেশিক সাহায্য ও বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগই পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয় করা হতো। শিল্পের উন্নয়নের জন্য বেশিরভাগ বিনিয়োগও পশ্চিম পাকিস্তানেই হতো। শিক্ষাক্ষেত্রেও বাঙালিরা বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে পূর্ব বাংলা এগিয়ে ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ পশ্চিম পাকিস্তান-পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিগুণের বেশি বরাদ্দ লাভ করায়- বাঙালিরা শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী চরম বৈষম্য প্রদর্শন করে। এ প্রেক্ষিতে ১৯৬৬ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা উত্থাপন করেন। উদ্দীপকের দৃশ্য-১ এ স্থল নৌ ও বিমান বাহিনীতে কর্মরত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসারের শতকরা হার উল্লেখিত হয়েছে, যেখানে সামরিক বৈষম্য স্পষ্টত বিদ্যমান। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে এ বৈষম্য ছাড়াও অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য ছিল। এ সকল বৈষম্য মোকাবিলায় ১৯৬৬ সালে ছয় দফা উত্থাপিত হয়েছিল। সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, শুধু সামরিক নয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষাসহ সকল বৈষম্য মোকাবিলার উদ্দেশ্যে ছয় দফা উত্থাপিত হয়।

No comments